কুষ্টিয়া জেলার সর্ববৃহৎ একটি উপজেলার নাম দৌলতপুর উপজেলা। এ উপজেলার সদরে উপজেলা চত্বরের দক্ষিণ পার্শ্বে নিরিবিলি ও মনোরম পরিবেশে বর্তমানে ৪ একর জমির উপর ১৯৮৫ সালের ১১ ডিসেম্বর এ কলেজটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এ কলেজটি অনেক চড়াই উত্রাই পেরিয়ে উপজেলার সকল বিদ্যাপিঠের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠ হিসাবে জেলা পযার্য়ে সীকৃতি লাভ করেছে এবং ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা ২০১৮ সালে জেলা পযার্য়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে পুরস্কার লাভ করেছে। এ ছাড়াও স্নাতক পযার্য়ে ভালো ফলাফলের জন্য খুলনা বিভাগের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কলেজ হিসাবে ২০০১ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুরস্কার লাভ করে। বর্তমানে এ উপজেলায় কারিগরি ও ভকেশনাল কলেজ সহ নন—এমপিও ও এমপিও ভূক্ত কলেজের সংখ্যা ১৮ টি। কিন্তু স্বাধীনতার পূর্ববতীর্ সময়ে মাধ্যমিক পযার্য়ে হাতে গুনা কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও উচ্চ মাধ্যমিক পযার্য়ে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিলো না। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে উপজেলা সদর হতে প্রায় ১৫—১৬ কি. মি. দূরে সীমান্ত এলাকায় খাষমথুরাপুর গ্রামে পিপল্স কলেজ নামে একটি মাত্র কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। যা এ উপজেলার বৃহৎ জনগোষ্ঠির শিক্ষাদান কার্যক্রমের জন্য যথেষ্ট ছিলো না। দীর্ঘদিন যাবৎ উপজেলা সদরে কোন কলেজ না থাকায় অত্র অঞ্চলের অধিকাংশ ছেলে মেয়ে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলো। অত্র অঞ্চলের কিছু সচ্ছল পরিবারের ছেলে মেয়েরা দূরে গিয়ে লেখাপড়া শিখলেও অধিকাংশ অসচ্ছল পরিবারের ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত থাকতো। তাই দৌলতপুর বাসির দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ছিলো উপজেলা সদরে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হোক। দীর্ঘদিন পর ১৯৮৫ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রয়াত শাহাদত হোসেন, প্রয়াত তোফাজ্জেল হোসেন, প্রয়াত একরামূল হক, প্রয়াত এ.কে.এম আমান উল্লাহ (বিএসসি) সহ মোঃ লুৎফর রহমান (মাষ্ঠার) দৌলতপুর বাজারে বসে দৌলতপুর সদরে একটি কলেজ স্থাপনের প্রাথমিক আলোচনা করেন এবং ১১ ডিসেম্বর ১৯৮৫ সালে দৌলতপুর পাইলট হাইস্কুলে একটি সভার আহ্বান করেন। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রয়াত আহসানুল হক পচা মোল্লা (সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী) উক্ত সভায় দৌলতপুর সহ পার্শ্ববতীর্ এলাকার বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ উপস্থিত হন। যাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন প্রয়াত শাহাদত হোসেন, প্রয়াত তোফাজ্জেল হোসেন, প্রয়াত একরামূল হক, প্রয়াত এ.কে.এম আমান উল্লাহ (বিএসসি), প্রয়াত মশিহুর রহমান (প্রধান শিক্ষক, দৌলতপুর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়), প্রয়াত আব্দুল জলিল সরদার (প্রধান শিক্ষক, দৌলতপুর পাইলট গার্লস স্কুল), প্রয়াত মওলানা হারেজ উদ্দিন, প্রয়াত হাসানুল ইসলাম রবিউল সরকার, প্রয়াত পবন মন্ডল, প্রয়াত আব্দুল কুদ্দুস মেম্বার, প্রয়াত ইয়াকুব আলী (সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান) ও প্রয়াত হোসেন মন্ডল যাদের মধ্যে জীবিত আছেন মোঃ রফিকুল আলম (সাবেক অধ্যক্ষ) মোঃ আমানুল হক মোল্লা (সাবেক উপাধ্যক্ষ), মোঃ আব্দুৎ তাওয়াব (অবঃ অধ্যাপক), মোঃ জুনাইদুর রহমান (অবঃ অধ্যাপক), মোঃ লুৎফর রহমান (মাষ্টার), মোঃ হারেজ উদ্দিন (সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান), মোঃ আলতাব হোসেন (সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান), মোঃ আব্দুল মতিন ও দেল মোহাম্মদ (মেম্বার)। সে দিনের সভায় উপস্থিত সকলের প্রবল দাবির মুখে উপজেলা সদরে দৌলতপুর কলেজ নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং উক্ত সভায় প্রয়াত শাহাদত হোসেন প্রথম দুই বিঘা জমি কলেজের নামে দান করার ঘোষনা দেন। ১৯৮৫ সালের ১৩ ডিসেম্বর তোফাজ্জেল সাহেবের সভাপতিত্বে পুনঃরায় একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় “দৌলতপুর কলেজ” নামে উপজেলা সদরে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয় এবং কলেজ পরিচালনার জন্য একটি অর্গানাইজিং কমিটি গঠিত হয়। যার সভাপতি হয় তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রয়াত ইয়াকুব আলী, সহ সভাপতি প্রয়াত শাহাদত হোসেন, প্রয়াত হাসানুল ইসলাম রবিউল সরকার, সেক্রেটারি প্রয়াত তোফাজ্জেল হোসেন, মোঃ লুৎফর রহমান (মাষ্টার), মোঃ আলতাফ হোসেন (সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান), কোষাধ্যক্ষ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, উক্ত সভায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে প্রয়াত আব্দুল জলিল সরদার (প্রধান শিক্ষক দৌলতপুর পাইলট গার্লস স্কুল) কে দায়িত্ব অর্পন করা হয় এবং আরও সিদ্ধান্ত হয় যতোদিন পর্যন্ত কলেজে নিজস্ব ভবন না হবে ততদিন পর্যন্ত দৌলতপুর পাইলট হাইস্কুলের পুরাতন হল ঘরটি ক্লাসরুম সহ কলেজের বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হবে। কলেজের জন্য নিধার্রিত যাইগা ঠিক করত জমি সংগ্রহের প্রস্তাবও গৃহীত হয়। যখন উপজেলা সদরে একটি কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত পযার্য়ে এবং জমি সংগ্রহের কাজ চলছে ঠিক তখনই তারাগুনিয়া সহ আল্লারদগার্র শিল্পপতি ও উচ্চ পযার্য়ের নেতাবৃন্দ তাগাগুনিয়া পল্লী বিদ্যুতের কাছে শিল্পপতি নুরুজ্জামান বিশ্বাসের নামে কলেজ করার জন্য বিশাল একটি টিনের ঘর নিমার্ন করে ফেলেন এবং নুরুজ্জামান সাহেব কলেজ ফান্ডে দুই লক্ষ টাকা জমা করে দেন যাতে দৌলতপুর কলেজ না হয়। আল্লারদগার্ সহ তারাগুনিয়ার লোকজন ও উচ্চ পদস্থ নেতাবৃন্দ প্রচন্ড আকারে বিরোধীতা শুরু করেন এবং তারা তাদের কলেজের নামে জমি রেজিষ্ট্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। ফলে দৌলতপুর বাসি বিপাকে পড়ে যায়। কারন কলেজের নামে যাদের জমি আগে রেজিষ্ট্রি হবে কলেজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য তারাই এগিয়ে থাকবেন। কারন তখনও দৌলতপুর কলেজ স্থাপনের স্থান নিধার্রন হয়নি এবং কলেজের নামে কোন জমিও রেজিষ্ট্রি হয়নি। এহেন অবস্থায় তৎকালীন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকতার্ জনাব মোঃ সোবহান সাহেব ঘোষনা দেন কলেজ হবে উপজেলা সদরের এক কিলোমিটারের মধ্যে। বিশেষ করে উপজেলা প্রশাসন সহ পুলিশ প্রশাসন দৌলতপুর কলেজের পক্ষে বিশেষ ভুমিকা রাখেন। তৎকালীন জেলা প্রশাসক এ.এফ.এম জিয়াউদ্দিন আহমেদ এবং উপজেলা নিবার্হী অফিসার মোঃ মজিবর রহমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। দৌলতপুর কলেজের নিজস্ব ভবন নিমার্ণের জন্য কোথাও মনপুত যাইগা না পাওয়াই উপজেলার দক্ষিণ পার্শ্বে কলেজ ভবন নিমার্ণের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। বর্তমানে যেখানে দৌলতপুর কলেজটির মূল ভবন অবস্থিত সেই খানে দৌলতপুর কলেজের নামে প্রয়াত শাহাদত হোসেন প্রথম দুই বিঘা জমি রেজিষ্ট্রি করে দেন। কিন্তু কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য একই স্থানে তিন একর জমি প্রয়োজন ছিলো সে পরিমান জমি না পাওয়ায় বিভিন্ন এলাকাবাসি কলেজের নামে তাদের জমি দান করেন। যাদের অনুদান ও নিরলস প্রচেষ্টায় দৌলতপুর কলেজটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে তাদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তারা হলেন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মরহুম মওলানা আব্দুল আওয়াল (চুয়ামল্লিকপাড়া), মরহুম হাসানুল ইসলাম রবিউল সরকার (রিফাইতপুর), মোঃ আজিজুল হক (হাকিমপুর), পরে লুৎফর রহমান (চক দৌলতপুর) ও মোঃ হারেজ উদ্দীন (শিতলাইপাড়া)। দাতা সদস্য মরহুম আবুল হারেছ মাজদুদ্দিন আহমেদ (চুয়ামল্লিকপাড়া), মরহুম সাদ উদ্দিন আহমেদ (চুয়ামল্লিকপাড়া), মরহুম একরামুল হক (চক দৌলতপুর), মরহুম তোফাজ্জেল হোসেন (চক দৌলতপুর), মরহুম দবির উদ্দিন (চক দৌলতপুর), মরহুম মশিহুর রহমান (চুয়ামল্লিকপাড়া), মরহুম ইসাহক আলী (চুয়ামল্লিকপাড়া), জনাব মোঃ জুনাইদুর রহমান (দরিপাড়া), জনাব মোঃ হেলালুর রহমান (দরিপাড়া), মরহুম পবন মন্ডল (শিতলাইপাড়া), মরহুম জান মোহাম্মদ মালিথা (চককৃষ্ণপুর), মরহুম হোসেন আলী মন্ডল, (চক দৌলতপুর), মরহুম মজিবর রহমান (লাউবাড়িয়া), মরহুম জসিম উদ্দিন (লাউবাড়িয়া), মরহুম সেকেন্দার আলী (লাউবাড়িয়া), জনাব মোঃ নজরুল ইসলাম (দৌলতপুর), জনাব মোঃ আব্দুল মতিন (চক দৌলতপুর), মরহুম দিদার হোসেন (চক দৌলতপুর), মরহুম ইনছান আলী (চক দৌলতপুর), জনাব মোঃ জিয়াউল আলম (চক দৌলতপুর), জনাব মোঃ মোজাম্মেল হক (চক দৌলতপুর), মরহুম ইনতাজ মন্ডল (মানিকদিয়াড়), মরহুম ইব্রাহীম মন্ডল (দুঃখীপুর), মরহুম কবীর হোসেন খান (ওসি দৌলতপুর থানা), মরুহম আব্দুস সালাম (লাউবাড়িয়া), জনাব মোঃ নুরুজ্জামান বিশ্বাস (আল্লারদগার্), মরহুম ইনতাজ আলী (আল্লারদগার্), মরহুম আমিরুল ইসলাম (দৌলতপুর), মরহুম এ,কে,এম আমানুল্লাহ (দৌলতপুর), মরহুম সামছুদ্দিন মন্ডল (স্বরুপপুর) যারা জমি দিতে পারেনি তারা বাঁশ, আর্থক সহযোগীতা ও শ্রম দিয়ে সাহায্য করেন। অর্থাৎ দৌলতপুর বাসীর সর্ব সাধারনের সহযোগীতায় দৌলতপুর কলেজটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ৩০ ডিসেম্বর ১৯৮৫ সালে সভায় সিদ্ধান্ত নিলেন ১৯৮৬—৮৭ শিক্ষাবর্ষে কলেজে ছাত্র—ছাত্রী ভর্তি করা হবে এবং কলেজের ভবন নিমার্ন না হওয়া পর্যন্ত দৌলতপুর পাইলট হাইস্কুলের পুরাতন ভবনে ক্লাস সমূহ পরিচালিত হবে। ১৯৮৬ সালের জুলাই তে ছাত্র—ছাত্রী ভর্তি শুরু হলে মানবিক, বানিজ্য ও বিজ্ঞানে মোট ২৩১ জন ছাত্র—ছাত্রী ভর্তি হয়। ০২/০৮/১৯৮৬ ইং তারিখের সভায় শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। তখন শিক্ষক পাওয়া খুবই দুরহ ছিলো। ক্লাস সমূহ কোনমতে চালানোর জন্য প্রথম নিয়োগ দেওয়া হয় ১। মোঃ রফিকুল আলম (ব্যবস্থাপনা) যিনি বানিজ্য বিভাগের সকল ক্লাস নিতেন ২। মোঃ শফিউল আলম (দর্শন) যিনি দীর্ঘদিন যাবৎ ইংরেজি সহ দর্শন বিভাগের বিভিন্ন ক্লাস নিতেন ৩। মোঃ আব্দুত তাওয়াব (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) ৪। মোঃ আমিনুদ্দিন (বাংলা) ৫। নূরুল ইসলাম (অর্থনীতি) ৬। মোঃ আমানুল হক (ইতিহাস) ৭। খাইরুল আলম (ভূগোল) ৮। প্রয়াত মজিবুর রহমান (হিসাববিজ্ঞান) ৯। মোঃ নওয়াব আলী (রসায়ন) ১০। মোঃ আজিজুল হক (জীববিজ্ঞান) ১১। মোঃ নুরুল ইসলাম (অর্থনীতি) চলে গেলে মোঃ সামছুর রহমান কে নিয়োগ দেওয়া হয়। জুনাইদুর রহমান কে (শরীরচচার্) শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দিয়ে পরে ইসলামের ইতিহাস বিষয়ের প্রভাষক হিসাবে নিয়োগ পান। ১২। মোঃ আজিজুল হক (পদার্থ) প্রদর্শক হিসাবে নিয়োগ পেয়ে পদার্থ বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ে ক্লাস নিতেন পরে পদার্থ বিজ্ঞানের প্রভাষক হিসাবে নিয়োগ পান ১৩। মোঃ আব্দুল মজিদ (ব্যবস্থাপনা) প্রধান করণীক হিসাবে নিয়োগ পেয়ে পরে প্রভাষক হিসাবে নিয়োগ পান ১৪। মোঃ ওহিদুল ইসলাম কে গ্রন্থাগারিক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। মোঃ আমিনুদ্দিন (বাংলা) চলে গেলে মোঃ ওহিদুল ইসলামকে বাংলা বিষয়ের প্রভাষক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। মোঃ সিদ্দিকুর রহমান (করণীক) ১৫। মোঃ খলিলুর রহমান (পিওন) ১৬। মোঃ আবু ইব্রাহীম (পিওন) ১৭। সোনা ভানু (আয়া) ১৮। ফজলুল বারী (নৈশ প্রহরী) চলে যাওয়ায় পরে সুবল মল্লিক কে নিয়োগ দেওয়া হয়। উপরোক্ত শিক্ষক—কর্মচারী নিয়ে দৌলতপুর পাইলট হাইস্কুলে প্রথম ——————————— তারিখে ক্লাস শুরু করা হয়। দীর্ঘদিন দৌলতপুর পাইলট হাইস্কুলে ক্লাস করার পর ০৩/০৮/১৯৮৬ ইং তারিখে সোমবার ১০:০০ ঘটিকার সময় দৌলতপুর কলেজের নামে নিজস্ব জমিতে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। যেটি বর্তমানে দৌলতপুর কলেজটির রবীন্দ্র কলা ভবন নামে পরিচিত এ ভবনের পূর্বপার্শ্বে ৮০ফিট লম্বা প্রথম চারটি রুম বিশিষ্ট টিনের ছাপড়া ও বাশের চাটাই দিয়ে ঘেরা একটি ঘর নিমার্ন করা হয়। তৎকালীন জাতীয় পার্টির খাদ্য প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত কোরবান আলী পঞ্চাশ বান টিন প্রদান করেন এবং উপজেলা চেয়ারম্যান প্রয়াত ইয়াকুব আলী উপজেলা হতে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে অনেক সাহায্য করেন। তখন দৌলতপুর কলেজের অবকাঠামো খুবই খারাপ ছিলো। যার কারনে একটু ঝড়—বৃষ্টি হলেই উড়ে যেতো। কোন বেঞ্চ ও আসবাবপত্র ছিলোনা। প্রয়াত হাসানুল ইসলাম রবিউল সরকার একটি টেবিল ও একটি আলমিরা দান করেন। দৌলতপুর পাইলট হাইস্কুল কয়েকটি বেঞ্চ ও একটি আলমিরা দান করেন। যা দিয়ে কোন মতে কলেজের ক্লাস সমূহ চলতো। কলেজের নিজস্ব কোন ফান্ড ছিলোনা। যার কারনে কলেজের আসবাব পত্র ক্রয় সহ অবকাঠামো নিমার্নের কোন সুযোগ ছিলোনা। এমন বেহাল অবস্থায় শিক্ষকরা ফাকা জাইগাই ক্লাস নিতেন। এমন অবস্থায় অনেক শিক্ষক—কর্মচারী ও ছাত্রী—ছাত্রী কলেজ ছেড়ে চলে যায়। সবার ধারনা ছিলো দৌলতপুর কলেজটি বোর্ডের স্বীকৃতি পাবেনা অথ্যার্ৎ কলেজটি হবেনা। তৎকালীন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ কবীর হোসেন খান (সোবহান সাহেবের পর) কলেজের এমন দুরবস্থা দেখে তিনি উদ্যোগী হয়ে কলেজের নামে রশিদ বই ছাপানো সহ ১৫০০০/= টাকা সংগ্রহ করে দেন এবং তিনি বিভিন্ন ইটভাটা হতে ৪০,০০০ ইট সংগ্রহ করে দেন এবং দৌলতপুর থানায় কর্মরত তৎকালীন দারোগা মোঃ হাবিবুর রহমান বিভিন্ন ব্যাক্তিবর্গের নিকট হতে বেশকিছু টাকা আদায় করে দেন। যা দিয়ে ১৬০ ফুট দৈার্ঘের তিনতলা মূল ভবন (বর্তমানে রবীন্দ্র কলা ভবন) এর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করা হয়। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রয়াত আব্দুল জলিল সরদার দৌলতপুর গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষক থাকায় দুই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করা তার পক্ষে সম্ভবপর হয়ে উঠছিলো না। এহেন পরিস্থিতিতে অগার্নাইজিং কমিটি সহ এলাকাবাসী ০৫/০১/১৯৮৭ ইং তারিখে দৌলতপুর কলেজে একটি জরুরী সভা ডাকেন। উক্ত সভায় মোঃ রফিকুল আলম (সাবেক অধ্যক্ষ) কে পূর্নকালীন অধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োগ দান করেন। পরে তিনার—ই দক্ষ পরিচালনা ও শিক্ষক—কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে কলেজটির সকল কার্যক্রম গতি পায়। অর্গানাইজিং কমিটির সদস্যবৃন্দ, বিশেষ করে প্রয়াত শাহাদত হোসেন, প্রয়াত তোফাজ্জেল হোসেন, প্রয়াত হাসানুল হক রবিউল ইসলাম সরকার সহ শিক্ষক—কর্মচারীবৃন্দ ও অধ্যক্ষ মিলো বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে অর্থ জমি ও বাশ সংগ্রহ করে এবং দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে দৌলতপুর কলেজটিকে প্রতিষ্ঠিত করে। অনেক চেষ্টা তৎবিরের মাধ্যমে অবশেষে ১৭/০৬/১৯৮৭ ইং তারিখে দৌলতপুর কলেজ মানবিক ও বানিজ্য বিভাগ যশোর শিক্ষা বোর্ডের স্বীকৃতি লাভ করে কিন্তু বিজ্ঞান বিভাগের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও প্রয়োজনীয় শিক্ষক না থাকায় বিজ্ঞান বিভাগকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়না। রিফাইতপুর হাইস্কুলের প্রায়ত শিক্ষক মরহুম আনোয়ারুল কাদির (পঁচা সরকার) সরকার রিফাইতপুর হাইস্কুল হতে এবং দৌলতপুর পাইলট হাইস্কুলের প্রয়াত বিএসসি এ.কে.এম আমানুল হক দৌলতপুর পাইলট হাইস্কুল থেকে যন্ত্রপাতি দিয়ে যথেষ্ট সাহায্য করেন যাদের অবদান চির স্মরনীয়। অনেকদিন পর বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে এবং উক্ত যন্ত্রপাতি দেখিয়ে বিজ্ঞান বিভাগ যশোর বোর্ডের স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৮৮ সালে দৌলতপুর কলেজ ১৪৩ জন ছাত্র—ছাত্রী নিয়ে প্রথম উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্র পায় এবং ভালো ফলাফলের সাথে ৮০% ছাত্র—ছাত্রী কৃতকার্য হয়। ফলে দৌলতপুর কলেজে দূর দূরান্ত থেকে প্রচুর ছাত্র—ছাত্রী ভর্তি হয় এবং কৃতিত্বের সাথে ফলাফল করতে থাকে তাতে দৌলতপুর কলেজের সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এর পর দৌলতপুর কলেজকে ডিগ্রী পযার্য়ে উন্নীত করা হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএ, বিএসএস ও বিকম পাস কোর্স চালু করা হয়। ১৯৯১—৯২ শিক্ষাবর্ষের্ বিএ, বিএসএস ও বিকম এবং ১৯৯৩—৯৪ বিএসসি স্বীকৃতি লাভ করে। খুলনা বিভাগে বিএসসি পাশ কোর্সের ফলাফলে দৌলতপুর কলেজ ১ম স্থান অধিকার করায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে এক লক্ষ টাকা পুরস্কার লাভ করে। ২০০৫ সালে দৌলতপুর কলেজে কারিগরি শিক্ষাবোর্ডে অধীনে দুটি ট্রেড চালু করা হয় বর্তমানে ৫টি ট্রেড চালু আছে। এছাড়াও অত্র অঞ্চলের দরিদ্র ছাত্র—ছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য ২০০৭—০৮ শিক্ষাবর্ষে ৪টি বিষয়ে (সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি এবং বাংলা) সম্মান কোর্স চালু করা হয়। বর্তমানে ১২টি বিষয়ে উন্নীত করা হয়েছে। শুধু তাই ই নয় দুটি বিষয়ে (বাংলা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান) মাস্টার্স কোর্স চালু করা হয়েছে। ১৯৮৫ সালের দেখতে পান বরজের মতো দৌলতপুর কলেজটি বর্তমানে দৌলতপুর উপজেলার শ্রেষ্ঠ কলেজ যার রূপকার সাবেক অধ্যক্ষ মোঃ রফিকুল আলম সেই ধারাবাহিকতা অব্যহত রেখেছেন বর্তমান অধ্যক্ষ মোঃ ছাদিকুজ্জামান। প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কলেজের সকল কার্যক্রম সহ শিক্ষক কর্মচারীর হাজিরা ও ছাত্র—ছাত্রীদের হাজিরা পরিচালিত হচ্ছে।